Header Ads

Header ADS



#শেষ_ঠিকান

শেষ পর্ব
ফোন রিসিভ করতে গিয়ে দেখি,
”অচেনা মানুষ“ নামটা ভেসে উঠেছে।
আর আমি রিসিভ করেই বলি,
-আসসালামু আলাইকুম!কে বলছেন?
ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ আসেনা।
তাই আমি আবার বলি,
-ওই হ্যালো,কে বলছেন?
-উহুম উহুম।আমি বলছি।
নাহ্ ভয়েজ টা তো জব্বর সুন্দর।
কিন্তু ভয়েজটা হালকা চেনা চেনা মনে হলেও,পুরোপুরি চিনতে পারছিনা।
এক জনের ভয়েজের মতও তো কত মানুষ এর ভয়েজ হয়।
-আমি কে?আমি'র কি কোন নাম নেই?
-আমি ফোন দেয়ার পর স্ক্রিনে কি নাম ভেসে উঠেছে?
-অচেনা মানুষ।ধুর থুক্কু,কিছুনা।
-আমি ওই অচেনা মানুষই।
-আপনার নাম টা বলবেন প্লিজ?আর কিভাবে আমার নাম্বার, না মানে আমার সিমের নাম্বার পেলেন সব কিছু একটু খুলে বলুন।
-কথা বলতে চেয়েছো বলেছি।
এখন আবার এত বায়না?
-সব কিছু না বললে কিন্তু কথা বলবোনা।
-সত্যি বলবেনা?
-না মানে।
-না মানে কি?একটুও খারাপ লাগবেনা?
-জানিনা,
জানিনা বলে আমি লাইন টা কেটে দেই।
ছেলেটাকে ভালোই মনে হয়।
কি সুন্দর ভাবে কথা বলে,
আমাকে এক্সামের সময় কত পড়া,লিখে বুঝিয়ে দিলো।
কত এডভাইজ দিলো।
না না,আমি মানুষ চিনতে ভুল করি।
এত সহজে কাউকে ভালো বলা আমার উচিৎ না।
কারণ আমি মানুষ চেনায় বড্ড কাঁচা।
এরপর থেকে ছেলেটা মাঝে মাঝে কল,মাঝে মাঝে মেসেজ দেয়।
ভালোই লাগে কথা বলতে।
কথা বলার সময় আম্মু আব্বু কেমন আছেন।
তাদের কথা মত যেন চলি।
এই সেই সব সময় বলবে সে।
প্রতিটা কথায় যেন এডভাইজ থাকে।
যেমন পড়াশোনা যেন কক্ষনো না ছাড়ি,বিয়ে হয়ে গেলেও যেন পড়াশোনা করি।নিজের পায়ে যেন দাঁড়াই।আম্মু আব্বুর স্বপ্ন যেন পূরণ করি।গরীব দুঃখীদের যেন সেবা করি।
খুব ভালো লাগে তার এসব কথা গুলো।
দেখতে দেখতে কয়েক মাস কেটে গেলো।
-আচ্ছা তোমার বৃষ্টি ভালো লাগে?
-হুম খুব।
-বৃষ্টিতে ভিজতে কেমন লাগে?
-খুবই ভালো।
-আমারো খুব ভালো লাগে।
আমি না প্রায়ই ভিজি বৃষ্টিতে।
-আমিও ভিজি।
-বাহ্ আমাদের মাঝেতো খুব মিল।
আর কি কি ভালো লাগে তোমার?
-এই ধরুণ,আকাশ,চাঁদ,রাত,শাড়ী,চুড়ি,নথ।
-আর আমাকে?
আমি লজ্জা পেয়ে লাইনটা কেটে দেই।
আমি কি ছেলেটার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি?
না না।আমার তো তার প্রতি দুর্বল হওয়া চলবেনা।
কারণ আমি চাইনা ২য় বার কারো কাছ থেকে আঘাত পেতে।
যে ভুল আমি অতীতে একবার করে এসেছি।
চাইনা সে ভুল আবার করতে।
অচেনা মানুষ টা আবার ফোন দেয়।
-লাইন কাটলে যে?
-এমনি।
-আচ্ছা,তোমার বলতে হবেনা।
আমাকে তোমার ভালো লাগে কিনা,
কিংবা আমাকে তুমি ভালবাসো কিনা।
কিন্তু যেদিন তুমি আমার দেয়া শাড়ী চুড়ি পরবে।
পরে রাস্তায় বের হবে।
আমি ঠিক সেদিনই বুঝে নেবো।
তুমি আমায় ভালবাসো।
আজ রাখি।
ভালো থেকো।
-আপনিও ভালো থাকবেন।
এর মধ্যে আমার অনার্স ১ম বর্ষের রেজাল্ট দিয়ে দেয়।
আমি এখন অনার্স ২য় বর্ষে পড়ি।
এর মধ্যে মাঝে মাঝে তার সাথে আমার কথা হতে থাকে।
কিন্তু কোন দিন সে আমাকে বলেনা যে চলো দেখা করি।
আমিও তাই গায়ে পড়ে সেধে সেধে বলিনা।
হঠাৎ একদিন আব্বু অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বাসায় কান্নাকাটি লেগে যায়।
খুব সিরিয়াস অবস্থা হয়ে যায় আব্বুর।
পরে ডাক্তার বলেন,আপাতত চিন্তার তেমন কারণ নেই।আব্বু স্ট্রোক করেছিলেন।
তবে সে যেন মানসিক কোন আঘাত না পান।
সেই দিকে খেয়াল রাখবেন।
আব্বু কিছুটা সুস্থ হলে আম্মুকে ডেকে বলেন।
-আমি আমার মেয়েটার বিয়েটা দেখে যেতে চাই শানায়ার মা।
-দেখে যেতে চাই মানে?কি সব বলছো এগুলো?
-না,খারাপ তো কিছু বলিনি।
আমি চাই আমার মেয়েটাকে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দিতে।
বলা তো চায়না কখন ওপাড়ের ডাক চলে আসে।
-এসব অলক্ষুণে কথা বলোনাতো।
বুঝলাম নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মেয়েকে বিয়ে দিতে চাও।
তবে পাত্র তো জোগাড় করতে হবে।
ভালো পাত্র পাবে কই?
-আমি অসুস্থ হবার আগে শফিক ভাই আমাকে তাদের ছেলের জন্য শানায়ার কথা বলেছিলেন।
আমি বলেছিলাম,এখন না।আরো পরে আমার মেয়েকে বিয়ে দিবো।
-শফিক ভাইয়ের ছেলেতো অনেক ভালো।
মাস্টার্স পাশ।তাছাড়া ভালো জবও করে।
ছোট সংসার।পরিবারেও কোন ঝামেলা নেই।
-হুম তাছাড়া কাছেও আছে।
আমাদের সব সময় দেখতে পারবে আমাদের মেয়ে।
আর আমরাও।
-তাহলে কি আমি ভাবীকে বলবো শানায়ার বাবা এখন রাজি হয়েছেন।
-হুম বলে দেখো তাহলে।
আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলাম।
বাবা মা সাহিল ভাইয়ার কথা বলছিলেন।
দুজনের মুখে কি হাসি।
দুজনেরই সাহিল ভাইয়াকে খুব পছন্দ বুঝাই যাচ্ছে।
কিন্তু আমার কেন মন খারাপ হচ্ছে।
আমি তো কাউকে ভালবাসি না।
বাবা মা যেখানে দিবেন আমি তো সেখানেই বিয়ে করবো।
তবে কেন বুকের ভেতর অদ্ভুত এক ব্যথা অনুভব করছি?
কেন বার বার অচেনা মানুষটার কথা মনে পড়ছে,
যাকে আমি চিনিনা জানিনা।
কোন দিন দেখিও নি।
তবে কি আমি তাকে?
না না,এ হতে পারেনা।
আমি ২য় বার কোন ভুল করতে চাইনা।
বাবা মায়ের পছন্দই আমার পছন্দ।
তারা যা করবেন আমার ভালোর জন্যই করবেন।
কারণ কোন বাবা মা তার সন্তানের খারাপ চান না।
তেমনি আমার বাবা মা ও চাইবেন না।
কোন দিন চাইবেন না।
আমি আমার রুমে চলে এলাম।
কিন্তু কোন কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিনা।
কেমন যেন অশান্তি অশান্তি লাগছে।
মোবাইল ফোন টা বেজে উঠলো।
অচেনা মানুষ টার কল।
বার বার রিং বেজে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
আমি রিসিভ করছিনা।
-কি হয়েছে শানায়া?তুমি ঠিক আছো তো?প্লিজ রিসিভ মাই কল।খুব চিন্তা হচ্ছে।প্লিজ। (মেসেজ)
মেসেজ দেখে আমি পরের কল টা রিসিভ করলাম।
-হ্যালো।
-কি হয়েছে তোমার এঞ্জেল?
আমিতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
ফোন রিসিভ করছিলেনা কেন?
-আপনি আজকের পর আর আমাকে ফোন দিবেন না।
-মানে কি?
-আর না কোন মেসেজ।
-কেন দিবোনা?
-কারণ বাবা মা আমার বিয়ে ঠিক করছেন।
তাই আমি চাইনা আমাদের আর কথা হোক।
-কিন্তু আমি তো তোমাকে...
-প্লিজ।কিছু বলতে হবেনা।
আমি কিছু শুনতেও চাচ্ছিনা,
একটা অচেনা অজানা ছেলের সাথে ফোনে কথা বলা যায়,কিন্তু সারাজীবন এক ছাদের নিচে তার সাথে কাটানো যায়না।
-শানায়া প্লিজ শোনো আমার কথা।
-না আমি কোন কথা শুনতে চাইনা।
অনেক বার জানতে চেয়েছি,কে আপনি।বাসা কোথায়,কি করেন,পরিচয় কি।
কিন্তু আপনি বলেন নি।
এটলিস্ট আমার সাথে একটা বার দেখা অব্ধি করতে চান নি।
আর দেখাও করতে হবেনা।
আজ এখানেই সমাপ্ত।
আপনি আর আমার সাথে কোন দিন যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না।
-শানায়া আমার একটা কথা শোনো প্লিজ।
-না,আজ আর কোন কথা নয়।
ভালো থাকবেন।বাবা মার খেয়াল রাখবেন।
খোদা হাফেজ।
আমি কথা গুলো বলে মোবাইল এর সিম খুলে মোবাইল টা অফ করে রেখে দিলাম।
যাতে অচেনা মানুষটা আমাকে আর কখনো ফোন দিতে না পারে।
আমি চাইনা আবার আঘাত পেতে।
চাইনা ২য় বার কোন ভুল করতে।
দুই একদিনের মধ্যেই বাবা মা সাহিল ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললেন।
তারা আমাকে দেখতে এসেই আংটি পরিয়ে যান।
আর বিয়ের দিন তারিখও পাকা করে যান।
দুই পরিবারের সবাইই খুব খুশি।
আমার বিয়েতে আমার বান্ধবীরাও খুব খুশি।
কিন্তু কেন যেন খুশি টা আমি হতে পারছিনা।
আমাদের গায়ে হলুদ হয়ে যায়।
আর আজ আমাদের বিয়ে।
কিন্তু আমি কিছুতেই অচেনা মানুষ টাকে ভুলতে পারছিনা।
আজ খুব বেশিই মনে পড়ছে তার কথা।
তাই আমি দ্রুত আমার সিম টা বের করে মোবাইলে ঢুকালাম।
আর অচেনা মানুষটাকে ফোন দিলাম।
-হ্যালো শানায়া।
আমি কাঁদতেছি।খুব কাঁদতেছি।
-প্লিজ কেঁদোনা শানায়া।
প্লিজ কেঁদোনা।
কথা বলো একটু,প্লিজ কথা বলো।
-অচেনা মানুষ।
-হুম বলো এঞ্জেল।
-আজ আমার বিয়ে।
এই বলে আমি কাঁদতে লাগলাম।
-আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম অচেনা মানুষ।
খুব ভালবেসে ফেলেছিলাম।
কিন্তু তোমাকে তো আমি আমার অতীত সম্পর্কে বলেছিই।
সেই জন্য আমি আর ২য় বার কোন ভুল করতে চাইনি।
কিন্তু আজ আমার মনে হচ্ছে,আমি হয়তো অন্য কাউকে বিয়ে করেই ভুল টা করছি।
কারণ আমি যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি,সেই মানুষ টা খুবই ভালো।
আর আমি তো তাকে ভালবাসিনা।
আর হয়তো ভালবাসতেও পারবোনা।
মানুষটাকে কিভাবে ঠকাবো আমি?
এদিকে তোমার কথাও ভুলতে পারছিনা আমি।
কি করবো বলে দাও আমায় তুমি,প্লিজ বলে দাও।
-আমি যা বলবো তা শুনবে তুমি?
-হুম শুনবো,কারণ আজ অব্ধি তুমি আমায় কোন খারাপ উপদেশ দাওনি।
-তাহলে আজো দেবোনা,এই বিশ্বাস টুকু রেখো।
যার জন্য বউ সেজে বসে আছো,
তাকেই বিয়ে করে নাও।
-কি বলছো তুমি?
-আমি যা বলছি ঠিকই বলছি।
আমাদের জীবনে কখনো কখনো এমন কিছু ঘটে যায়,যার জন্য আমরা প্রস্তুত থাকিনা কিংবা কল্পনাও করিনা।
কিন্তু আমাদের পরিস্থিতির সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে হয়।
ভালো থেকো।
সুখী হও।
আল্লাহ্‌ হাফেজ।
অচেনা মানুষ টা কথা গুলো বলে লাইন কেটে দিয়ে ফোন টা বন্ধ করে দেয়।
আর আমি রুমে বসে কাঁদতে থাকি।
কিছু ক্ষণ পর আমার বান্ধবীরা এসে আমার মুছে যাওয়া কাজল আর সাজ আবার ঠিক করে দেয়।
আর বাইরে থেকে কয়েক জনের চিল্লানোর আওয়াজ আসে,
বর এসেছে বর এসেছে।
আর আমি বসে বসে ভাবতে থাকি,
সাহিল ভাইয়া এলেই আমি তাকে বিয়ের আগেই সব বলে দেবো।
আমি চাইনা,মানুষ টা ঠকুক।
আর বাইরে থেকে কয়েক জনের চিল্লানোর আওয়াজ আসে,
বর এসেছে বর এসেছে।
আর আমি বসে বসে ভাবতে থাকি,
সাহিল ভাইয়া এলেই আমি তাকে বিয়ের আগেই সব বলে দেবো।
আমি চাইনা,মানুষ টা ঠকুক।
বর যাত্রী চলে এসেছে।
-দোস্ত তোকে যা লাগছেনা।থুক্কু,ভাবী আপনাকে যা লাগছেনা।
কি কপাল আমার দেখ,আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ে আর আমি কিনা থাকতে পারলাম না।
ভাইয়া টা যে কিনা,তোকেই বিয়ে করতে হলো তার।
আর আমি কিনা নিজের ভাই য়ের বিয়েতে থাকতে গিয়ে নিজের বেস্টির বিয়েতেই থাকতে পারলাম না,হি হি।
-সীমা ফান পরে হবে।
আগে তুই তোর ভাইয়াকে গিয়ে বল আমি তার সাথে কথা বলতে চাই।
-কেন?একটু পরেই তো বিয়ে।এখনি তড় সইছেনা।
-ফান করিস না প্লিজ।সাহিল ভাইয়ার সাথে আমার অনেক জরুরি কথা আছে।
-কি কথা শুনি?
-না আমি তাকেই বলবো যা বলার।
-ওকে আমার ভাবীজান,আমি গিয়ে ভাইয়াকে বলছি তুই তার সাথে কথা বলতে চাস।
-হুম বল।
:
-কিরে বলেছিস?
-হুম বলেছি,কিন্তু ভাইয়া কি করে আসবে।
ওখানে সব মুরুব্বিরা বসে আছেন।
-যেভাবেই হোক আসতে হবে।
তাকে কথা গুলো বলা খুবই জরুরি।
-কি এমন কথা যা আমাকে বলা যাবেনা?
-তবে শোন,তোর মনে আছে আমার জন্মদিনে একটা ছেলে আমাকে শাড়ী চুড়ি গিফট করেছিলো।
-হুম মনে আছে।
-ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব হয় জানিস তো।
-হুম তাও জানি।
-কিন্তু আমি এখন বুঝতে পেরেছি,ওটা শুধু মাত্র বন্ধুত্ব ছিলোনা।
-তাহলে কি ছিলো?
-ওটা আমার ভালবাসা ছিলো।
যা আজ আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।
-কি বলছিস তুই আজ এসব।
-হ্যাঁ ঠিকই বলছি,
-তাই আমি সাহিল ভাইয়াকে ঠকাতে চাইনা।আমি তাকে সব কিছু সরাসরি বলে দিতে চাই।
-তারপর?
-তারপর কি হবে তা আমি জানিনা।
-ছেলেটা কে জেনেছিস?দেখেছিস?
-না?
-সে কি বলেছে?
-বলেছে বিয়ে করে নিতে।
-তবে শোন,তুই চোখ বন্ধ করে ভাইয়াকে বিয়ে করে নে।
একবার আঘাত পেয়েছিস মনে আছে?
-সেই ভয়েই আমি অচেনা মানুষটার সাথে নিজেকে জড়াইনি।
কিন্তু আজ দেখ,আমি নিজেই তার মায়ায় জড়িয়ে গেছি।
-যা হয়েছে হয়েছে।
সব কিছু এখানেই বাদ।
তুই এই সব কিছুই ভাইয়াকে বলবিনা।
যা হচ্ছে হয়ে যেতে দে।
আল্লাহ্‌ যা করবেন তা ভালোর জন্য করবেন।
-কিন্তু আমি একটা মিথ্যে নিয়ে জীবন শুরু করতে পারবোনা।
-মানে?
-সাহিল ভাইয়াকে সত্যি না জানিয়ে তার সাথে সম্পর্কে জড়ালে তো মিথ্যে নিয়েই জীবন শুরু করা লাগবে।
তা আমার দ্বারা সম্ভব না দোস্ত।
আমি পারবোনা এই ভালো মানুষ টাকে ঠকাতে।
-ওই তো সাহিল ভাইয়া চলে এসেছে।
-আপনি এসেছেন?
-হুম।
-আমি আপনাকে বিয়ে হবার আগেই কিছু কথা বলতে চাই।
-শানায়া প্লিজ।
-তুই চুপ থাক সীমা।
আমাকে বলতে দে।
শুনুন,আমি জানি আপনি খুব ভালো একটা ছেলে।
শুধু আমি কেন,এলাকার সবাই জানে আপনি খুব ভালো।
আমার আম্মু আব্বুও আপনাকে খুব বেশি পছন্দ করে।
তাই আমি চাইনা আপনার মত এত ভালো একটা মানুষকে ঠকাতে।
তাই আমি বিয়ের আগেই আপনাকে সব জানিয়ে দিতে চাই।
আমি প্রথমে একজনকে ভালবাসতাম,আর তার কাছ থেকে প্রতারিত হয়েছি।
-শানায়া,ভাইয়া জানেন এটা।
আমি তাকে বলেছিলাম।
-ও আচ্ছা।এরপর আমি পড়াশোনায় মন দেই।
কয়েক বছর কেটে যায়,একদিন এক ছেলে আমাকে আমার জন্মদিনের দিন সারপ্রাইজ দেয়।
তারপর থেকে টুকটাক মেসেজ দিতো।
আমিও দিতাম।
এরপর আমাদের ফোনে কথা হয়।
সে আমাকে সব সময় ভালো উপদেশ দিতো।সব সময় বলতো আম্মু আব্বুকে যেন কখনো কষ্ট না দেই।
মন দিয়ে যেন পড়াশোনা করি।
আর এক্সামেও সে খুব সাহায্য করতো।
ধীরেধীরে আমাদের বন্ধুত্ব হয়।
তারপর হঠাৎ একদিন বাবা মা আমার বিয়ে ঠিক করেন আপনার সাথে।
তাই আমি তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই।
কারণ আমি প্রথম বার ভুল করেছি,২য় বার আর ভুল করতে চাইনি।
কেননা ছেলেটা আমার সাথে কখনো দেখা করেনি।তাই একটু অবিশ্বাস কাজ করেছে।
কিন্তু আজ আমি বুঝতে পারছি।
আমি সেই অচেনা মানুষ টাকে ভালবেসে ফেলেছি।
খুব ভালবেসে ফেলেছি।
হয়তো তাকে ভুলতেও পারবোনা আমি কোন দিন।
কিংবা এ ও জানিনা,কোন দিন আমি আপনাকে ভালবাসতে পারবো কিনা।
তাই আমি চাইনা আপনি কোন ভাবে ঠকে যান।
তাই আমি আপনাকে বিয়ের আগেই সব জানিয়ে দিলাম।
এখন আপনার ইচ্ছে,আপনার যা মনে চায় আপনি তা করতে পারেন।
চাইলে বিয়েটাও ভেঙে দিতে পারেন।
কিন্তু আম্মু আব্বু খুব কষ্ট পাবে এতে।
এই ভেবেই কষ্ট হচ্ছে।
আপনি কোন কথা বলছেন না কেন?
চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন যে?
-কি বলবো,কি ই বা বলার আছে আমার?
ছেলেটাকে বলেছিলে আজ তোমার বিয়ে?
কি বলেছে সে?
-হুম বলেছিলাম,বলেছে বিয়েটা করে নিতে।আর বলেছে...
-কি বলেছে?
-আপনার কন্ঠ টা না,
-কি?
-না মানে,
-কি বলেছে ছেলেটা?
-বলেছে,
-হুম,কি বলেছে?
-বলেছে যার জন্য বউ সেজে বসে আছো,
তাকেই বিয়ে করে নাও।
আমাদের জীবনে কখনো কখনো এমন কিছু ঘটে যায়,যার জন্য আমরা প্রস্তুত থাকিনা কিংবা কল্পনাও করিনা।
-তাহলে তাই করো বিয়েটা করে নাও।
-কিন্তু আপনার কন্ঠটা।
-কিন্তু আমাদের পরিস্থিতির সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে হয় এঞ্জেল।
-হুম জানিতো।
কিহ?এঞ্জেল?(অবাক হয়ে)
এঞ্জেল তো আমাকে অচেনা মানুষ টা ডাকে।
আর পরিস্থিতির সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে হয়,এই কথাটাও তো সে বলেছে ফোন কাটার আগে।
আর এ ও বলেছে সুখী হও।
আমার মোবাইল টা কই আমার মোবাইল।
আমার মোবাইল টা বের করে আমি অচেনা মানুষ টার নাম্বারে ফোন দিলাম।
আর তখনি সাহিল ভাইয়ার ফোন টা বেজে উঠলো।
সে রিসিভ করলো আমারই সামনে,
আর বল্লো,
-বিয়েটা করে নাও এঞ্জেল।
-আমি মোবাইল টা কানে নিয়ে অচেনা মানুষ টার চোখের দিকে তাকিয়ে কাঁদছি।
-কেঁদোনা এঞ্জেল,তুমি কাঁদলে আমার খুব কষ্ট হয়।
-আমি করবোনা বিয়ে সাহিল ভাইয়াকে।
আমি আমার অচেনা মানুষটাকেই বিয়ে করতে চাই।
-ওকে,তবে তাই হোক।
অচেনা মানুষ টার বুকেই হোক তোমার শেষ ঠিকানা।
আমি এক দৌড়ে অচেনা মানুষ টাকে জড়িয়ে ধরি।
সেও আমাকে জড়িয়ে ধরে,
আর বলে,
বিয়েটাতো হতে দাও।
আমি সাহিল ভাইয়া ওরফে অচেনা মানুষটার বুকে দুইটা ঘুষি দিয়ে সরে আসি।
-ওরে বাবা একের ভেতর দুই?(সীমা)
ভাইয়া,তোমার দ্বারা এসব কেম্নে সম্ভব?
আমি তো ভেবেই পাচ্ছিনা কিছু।
-তোর আর এত কিছু বুঝতে হবেনা।
পাকা মেয়ে,জানিস না ভাইয়া ভাবীর মাঝে থাকতে নেই।
-এখনো বিয়ে হয়নি হুহ।
যাও তাড়াতাড়ি আমি ভাবীকে নিয়ে আসছি।
-ওহ হ্যাঁ,আগে তো বিয়ে টা করতে হবে।
তারপর আমাদের বিয়েটা হয়ে যায়।
দুই পরিবারের সবাই খুশি,আমিও খুশি সেও খুশি।
আমি বিদায় নিয়ে সাহিলদের বাসায় চলে এসেছি।
সীমা আমাকে একটু আগে সাহিলের ফুলে সাজানো ঘরটাতে বসিয়ে দিয়ে গেছে।
আমি চুপ করে বসে আছি।
আর হঠাৎ সাহিলের আগমন।
-কি করে আমার এঞ্জেল টা?
-বসে বসে ভাবছে কি দিয়ে পিটানো যায়।একটা লাঠি দরকার।
-কেন কেন?
-চোর কোথাকার।কি সাংঘাতিক পাজি আপনি,নাটক বাজ।
-আরে শোনোনা,
-কিচ্ছু শুনবোনা,কেন এমন করলেন আমার সাথে?হুম?
আর কবে থেকে এসব প্ল্যান করেছেন শুনি?
-আরে শোনো,
তুমি যখন সীমার সাথে বাসায় আসতে আমাদের।
তখন থেকেই তোমাকে আমার ভালো লাগে।
এরপর থেকে আড়ালে আবডালে তোমাকে আমি দেখতে থাকি।
এক সময় আমি বুঝতে পারি,তোমাকে আমি ভালবেসে ফেলেছি।
তাই আমি সীমার মোবাইল থেকে তোমার মোবাইল নাম্বার নিয়ে নেই।
আর ওর কাছ থেকেই তোমার সম্পর্কে টুক টাক মাঝে মাঝে জানি।
কিন্তু ও এসবের কিছুই জানেনা।
-এত্ত বড় চোর আপনি হুহ।
-কিন্তু কি জানো,আমিও কিন্তু তোমার মত আঘাত পেয়েছি।
-কিভাবে?
-তুমি যখন বলেছো,যে তোমার বিয়ে ঠিক করছে তোমার বাবা মা।
তখনই যেন আমার বুকের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো।
-কেন?
-কারণ আমি তো জানিইনা আমার বাবা মা যে আমার জন্য তোমাকে পছন্দ করেছেন।
আর বাবা যে তোমার আব্বুকে প্রস্তাব দিয়েছেন।
আর তোমার বাবা মা যে আমার সাথেই বিয়ে দিতে চাইছেন।
-তাহলে বাবা মা নিজে থেকেই আমাকে পছন্দ করেছেন?
-হুম।ঠিক তাই।
তুমি যখন কথা গুলো বলে মোবাইল অফ করে দিয়েছিলে,আমি তো পাগলের মত হয়ে গিয়েছিলাম।
কত কান্না করেছি।
ডিসিশন নিয়েছি সকালেই নাস্তার টেবিলে সবাইকে বলবো,
তোমাকে আমি ভালবাসি,
আর তোমার বাসায় যেন বিয়ের প্রস্তাব পাঠান তারা।
আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
কিন্তু আমি বলার আগেই দেখি মা আমাকে বলে উঠলেন।
-সাহিল,
-জ্বী মা।
-শানায়াকে তোর কেমন লাগে রে?
তুমি জানো তোমার নাম শুনে আমার বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়ে গিয়েছিলো।
মনে মনে ভাবছিলাম বিয়ের দাওয়াতের কথা বলবে নাকি।
বিয়ে কি ঠিক হয়ে গেলো নাকি।
-হ্যাঁ মা,ভালো তো।
-ওকে তোর জন্য তোর বাবা আর আমি পছন্দ করেছি।তোর কোন অমত নেইতো?
-না মা,তোমাদের পছন্দই আমার পছন্দ।
-সীমা কি বলিস?
-আমি তো মহা খুশি।আমার বেস্টু আমার ঘরেই আমার ভাবী হয়ে এলে।
-তাহলে আর কি,আজই গিয়ে আংটি পরিয়ে আসি।কি বলিস?
-তোমরা যা ভালো মনে করো।
অবশেষে কলিজায় যেন পানি এলো।
মা বাবার কথা শুনে তো মনে মনে ঈদ লেগে গিয়েছিলো।
তারপর সাহিল আমাকে জড়িয়ে ধরে বল্লো,
আর এরপর এইতো হয়ে গেলো আমাদের বিয়ে।
আমিও পেয়ে গেলাম আমার এঞ্জেলকে।
সাহিলের কথা শেষ হতেই আমিও সাহিলের বুকে মাথা রেখে বললাম।
-আর আমিও খুঁজে পেলাম আমার আমার শেষ ঠিকানা এবং আমার চিরচেনা মানুষটাকে।
সমাপ্ত।
সবাই ভালো থাকবেন।
গল্পটা কেমন লাগলো সবার,আশা করি জানাবেন।
ধন্যবাদ।

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.